লটকন

লটকনের চাষ প্রণালী
লটকন বাংলাদেশের অতি সুপরিচিত ফল। ফল গোলাকার ও পাকা অবস্থায় হলুদ। ফলের খোসা নরম ও পুরু। প্রতি ফলে তিনটি করে বীজ থাকে। উৎপাদনের পরিমাণ বেশি না হলেও দেশের সব এলাকাতেই এর চাষ হয়। নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর নেত্রকোণা ও সিলেট এলাকায় লটকন চাষ বেশি হয়। 
 

লটকনের ওষুধিগুণ
১.    লটকন অম্লমধুর ফল।
২.    লটকন খাদ্যমানেও সমৃদ্ধ।
৩.    ফল খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় ও  নিবারন হয়।
৪.    শুকনো গুঁড়ো পাতা খেলে ডায়রিয়া ও মানসিক চাপ কমায়।

চাষ পদ্ধতি
মাটি
১.    শুনিকাশযুক্ত প্রায় সব ধরণের মাটিতেই লটকনের চাষ করা যায়।
২.    তবে বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
৩.    উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি এবং উন্মুক্ত বা আংশিক ছায়া চাষ করা যায়।

চারা রোপণের সময়
১.    বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়
২.    তবে বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও গাছ লাগানো যায়।

রোপণের দূরত্ব
১.    সারি থেকে সারির দূরত্ব ঃ ৬ মিটার
২.    চারা থেকে চারার দূরত্ব ঃ ৬ মিটার

গর্ত তৈরি
১.    গর্তের আকার হবে ৯০ সেমি
২.   গর্ত করার ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে।
    
সার                        সারের পরিমাণ/গর্ত
১) গোবর / জৈব সার     ১৫-২০ কেজি
২) টিএসপি                 ৫০০ গ্রাম
৩) এমপি                   ২৫০ গ্রাম

৩.  গর্ত ভর্তি করার সময় মাটি শুকনা হলে গর্তে পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।

চারা রোপণ ও পরিচর্যা
১.    সাধারণত বীজ দিয়ে লটকনের বংশ বিস্তার করা যায়।
২.    সমতল জমিতে বর্গাকার বা আয়তাকার পদ্ধতিতে লটকনের চার লাগানো যেতে পারে।
৩.   গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে নির্বাচিত চারা সোজাভাবে লাগিয়ে চারদিকে মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে।
৪.    চারা লাগানোর পর পর পানি দিতে হবে।
৫.    প্রতি ১-২ দিন অন্তর পানি দিতে হবে।
৬.    প্রয়োজনবোধে বাঁমের খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

সার প্রয়োগ
প্রতি বছর পূর্ণবয়স্ক গাছে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নাম               সারের পরিমাণ/গাছ
১) গোবর / জৈব সার       ১৫-২০ কেজি
২) ইউরিয়া                   ১ কেজি
৩) টিএসপি                  ০.৫ কেজি
৪) এমপি                     ০.৫ কেজি
 
অথবা, মিশ্রসার প্রয়োগ করলে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নাম                                সারের পরিমাণ/গাছ
১) গোবর / জৈব সার                       ১৫-২০ কেজি
২) এনপিকেএস মিশ্র সার (১২-১৫-২০-৬)   ১ কেজি
 
উপরোক্ত সার গাছের গোড়া থেকে ১ মিটার দূরে যতটুকু জায়গায় দুপুুর বেলা ছায়াপড়ে ততটুকু জায়গায় ছিটিয়ে কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

সেচ
১.  চারা রোপণের প্রথম দিকে ঘন ঘন সেচ দেয়া দরকার
২.  ফল ধরার পর দু’একটা সেচ দিতে পারলে উপকার পাওয়া যায়।

ডাল ছাঁটাই
১.  গাছের মরা, রোগাক্রান্ত ও কীটাক্রান্ত ডাল ছাঁটাই করে দিতে হবে।

ফল সংগহ
শীতের শেষে গাছে ফুল আসে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ফল পাকে।