তরমুজ

তরমুজ

তরমুজ


বংশ বিস্তার
তরমুজের বংশবিস্তার সাধারণত বীজ দ্বারাই করা হয়ে থাকে।

জমি তৈরি
প্রয়োজনমতো চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। জমি তৈরির পরম মাদা প্রস্তুত করতে হবে। মাদাতে সার প্রয়োগ করে চারা লাগানো উচিত।

বীজ বপন সময়/উৎপাদন মৌসুম
বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী। বীজ বোনার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম পক্ষ সর্বোত্তম। আগাম ফসল পেতে হলে জানুয়ারি মাসে বীজ বুনে শীতের হাত থেকে কচি চারা রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য পলি টানেল ব্যবহার করা যায়।

বপন/রোপণ পদ্ধতি
সাধারণত মাদায় সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও চারা তৈরি করে মাদাতে চারা রোপণ করাই উত্তম।

বীজ বপন
সাধারণত প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করা হয়। বপনের ৮-১০ দিন আগে মাদা তৈরি করে মাটিতে সার মিশাতে হয়। দু মিটার দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে দু মিটার অন্তর মাদা করতে হয়। প্রতি মাদা ৫০ সেমি. প্রশস্ত ও ৩০ সেমি. গভীর হওয়া বাঞ্চনীয়। চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় দুটি করে চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। 

চারা রোপণ
বীজ বপণের চেয়ে তরমুজ চাষের জন্য চারা রোপণ করা উত্তম। এতে বীজের অপচয় কম হয়। চারা তৈরির জন্য ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে বালি ও পচা গোবর সার ভর্তি করে প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বপন করা হয়। ৩০-৩৫ দিন বয়সের ৫-৬ পাতাবিশিষ্ট একটি চারা মাদায় রোপণ করা হয়।

বীজের পরিমাণ
প্রতি হেক্টরে ৮৫০-১ হাজার গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

সার প্রয়োগ 
তরমুজের জমিতে নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে-

সার                    মোট পরিমাণ     মাদা তৈরি      পরবর্তী পরিচর্যা 
                       (হেক্টর প্রতি)      কালে দেয়      হিসাবে মাদায় দেয়

                                  
 ১ম কিস্তি                                  ২য় কিস্তি                  ৩য় কিস্তি                ৪র্থ কিস্তি
(চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর)  (প্রথম ফুল ফোটার সময়) (ফল ধারণের সময়) (ফল ধারণের ১৫-২০ দিন পর)


গোবর/কম্পোস্ট   ২০ টন    সব    -    -    -    -
ইউরিয়া      ২৮০ কেজি     -    ১০০ কেজি    ৬০ কেজি    ৬০ কেজি    ৬০ কেজি
টিএসপি     ১০০ কেজি      সব    -    -    -    -
এমপি      ৩২০ কেজি     -    ৮০ কেজি    ৮০ কেজি    ৮০ কেজি    ৮০ কেজি

বীজের অঙ্কুরোদগম 
শীতকালে খুব ঠাণ্ডা থাকলে বীজ ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে গোবরের মাদার ভেতরে কিংবা মাটির পাত্রে রক্ষিত বালির ভেতরে রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যে বীজ অঙ্কুরিত হয়। বীজের অঙ্কুর দেখা দিলেই বীজ তলায় অথবা মাদায় স্থানান্তর করা ভালো।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
শুকনো মৌসুমে সেচ দেয়া খুব প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রতিটি গাছে ৩-৪টির বেশি ফল রাখতে নেই। গাছের শাখার মাঝামাঝি গিটে যে ফল হয় সেটি রাখতে হয়। চারটি শাখায় চারটি ফলই যথেষ্ট। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ৩০টি পাতার জন্য মাত্র একটি ফল রাখা উচিত।

পরাগায়ন
সকালবেলা স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ফোটার সাথে সাথে স্ত্রী ফুলকে পুরুষ  ফুল দিয়ে পরাগায়িত করে দিলে ফলন ভালো হয়। 

পোকামাকড় ও রোগবালাই পাতার বিটল পোকা প্রথম দিকে পোকাগুলোর সংখ্যা যখন কম থাকে তখন পোকা ডিম ও বাচ্চা ধরে নষ্ট করে ফেলতে হবে। পোকার সংখ্যা বেশি হলে রিপকর্ড/সুমিথিয়ন/ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১ মিলি/লিটার মাত্রায় সপ্তাহান্তে স্প্রে করতে হবে। 

জাব পোকা
এ পোকা গাছের কচি কাণ্ড, ডগা ও পাতার রস শুষে খেয়ে ক্ষতি করে। এ পোকা দমনের জন্য সুমিথিয়ন/ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ২ মিলি/লিটার মাত্রায় স্প্রে করতে হবে। 

মাজরা পোকা
স্ত্রী পোকা ফলের খোসার নিচে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো বের হয়ে ফল খেয়ে নষ্ট করে ফেলে এবং ফলগুলো সাধারণত পচে যায়। এপোকা দমনের জন্য রিপকর্ড/সুমিথিয়ন/ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১ মিলি/লিটার মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।

কাণ্ড পচা রোগ
এ রোগের আক্রমণে তরমুজ গাছের গোড়ার কাছের কাণ্ড পচে গাছ মরে যায়। প্রতি কারের জন্য ২.৫ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি ১ লিটার পানেতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে। 

ফিউজেরিয়াম উইল্ট রোগ
এ রোগের আক্রমণে গাছ ঢলে পড়ে মারা যায়। নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করা হলে এ রোগের প্রকোপ কম থাকে। রোগাক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেরতে হবে। 

ফসল সংগ্রহ
জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে তরমুজ পাকে। সাধারণত ফল পাকতে বীজ বোনার পর থেকে ৮০-১১০ দিন সময় লাগে। তরমুজের ফল পাকার সঠিক সময় নির্নয় করা একটু কঠিন। কারণ অধিকাংশ ফলে পাকার সময় কোনো বাহ্যিক লক্ষণ দেখা যায় না। তবে নীচের লক্ষণগুলো দেখে তরমুজ পাকা কি না তা অনেকটা  অনুমান করা যায়।

  •  ফলের বোঁটার সঙ্গে যে আকর্শি থাকে তা শুকিয়ে বাদামি রং হয়।
  • খোসার উপরে সূক্ষ লোমগুলো মরে পড়ে গিয়ে তরমুজের খোসা চকচকে হয়।
  •  তরমুজের যে অংশটি মাটির ওপর লেগে থাকে তা সবুজ থেকে উজ্জল হলুদ রংঙের হয়ে ওঠে।
  • তরমুজের শাঁস লাল টকটকে হয়।
  • আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলে যদি ড্যাব ড্যাব শব্দ হয় তবে বুঝতে হবে যে ফল পরিপক্কতা লাভ করেছে। অপরিপক্ব ফলের বেলায় শব্দ হবে অনেকটা ধাতবীয়।


ফলন
সযত্নে চাষ করলে ভালো জাতের তরমুজ থেকে প্রতি হেক্টরে ৫০-৬০ টন ফলন পাওয়া যায়।