গর্জন তেল বা গুজি তেল বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় তেল ফসল। গর্জন তিলের গুণাগুণের দিক থেকে ভালো।
পুষ্টিমূল্য ও ভেষজ গুণঃ লিনোনিক ফ্যাটি এসিড ও প্রোটিন আছে। কোলেস্টেরল ফ্রি। আবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড সমূহের উৎস হিসেবে কাজ করে।
ব্যবহারঃ ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও সাবান ও প্রসাধনী তৈরিতে এর ব্যবহার হয়। এর খৈল গো-মহিষের খুব উপাদেয় খাদ্য।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ গর্জন তিল প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়।
জাত পরিচিতিঃ
শোভাঃ জাতটি বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। ১৯৮৮ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক চাষের জন্য অনুমোদিত হয়। গাছের কান্ড সাধারণত সবুজ ও বেগুনী রংয়ের হয়। কান্ড ও পাতায় লোমের মতো থাকায় হাত দিয়ে ধরলে খসখসে মনে হয়। তবে সেগুলো বেশ নরম। ফুল ছোট ও হলুদ রংয়ের। বীজ সূচাকৃতির এবং ১.২৫ সে.মি. পাতলা ও বেশ মসৃন। ১০০০ বীজের ওজন ৩-৪ গ্রাম। জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ১.০৫-১.১০ টন।
বীজ বপনঃ জমিতে বীজ ছিটিয়ে বপন। তবে সারিতে বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৩০ সে.মি.। হেক্টর প্রতি বীজের পরিমাণ ৭.৫-৮.৫ কেজি।
বপন সময়ঃ কার্তিক মাস
সার ব্যবস্থাপনাঃ জমির উর্বরতা ও কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের ভিত্তিতে সারের পরিমাণ কমবেশী হতে পারে। তবে সাধারণ হিসেবে প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া সার ৭০-৮০ কেজি, টিএসপি সার ১১০-১৩০ কেজি, এমওপি সার ৪৫-৫৫ কেজি। অর্ধেক ইউরিয়া ও বাকি অন্যসব সার শেষ চাষের সময় জমিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর কুড়ি আসার সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ জমিতে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়না, কিন্তু মাটিতে রস না থাকলে সেচ দেয়া প্রয়োজন। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানি দিয়ে তুলে ফেলতে হবে।
রোগবালাই ব্যবস্থাপনাঃ রোগের নামঃ পাতা ঝলসানো রোগ অলটারনেরিয়া প্রজাতির ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের আক্রমণে প্রথমে পাতার উপর অসম আকৃতির গাঢ় বাদামী বণের্র দাগ পড়ে। দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হওয়ার পর অনেকগুলো দাগ একত্রিত হয়ে পাতার অধিকাংশ স্থান দখল করে ফেলে। আক্রমণ বেশী হলে পাতা ঝরে পড়ে।
ব্যবস্থাপনাঃ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল-৫০ ডব্লিউ পি অথবা ডাইথেন-এম-৪৫ মিশিয়ে জমিতে ২/৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল তোলাঃ ১০৫-১১০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়।