কৃষিতে বটিয়াঘাটার নারী

কৃষিতে বটিয়াঘাটার নারী

 কথায় আছে Agriculture is the Pioneer of all culture and Women is the pioneer of Agriculture. রীর কোমল হাতের পরশে অতনু বীজ সর্বপ্রথম মাটির গভীরে প্রোথিত হয়েছিল, পরে তা অঙ্কুরিত হয়ে উজ্জীবিত হয়ে, শাখা প্রশাখা ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে মানুষের অন্ন বস্ত্র আশ্রয় সেবা ওষুধ পুষ্টি বিনোদনের সহায়ক হয়েছিল। দুদণ্ড শান্তির পসরা বিকোশিত করে দিয়েছিল মানুষের জন্য। নারী মমতাময়ী বলেই মাটির মতো মায়ের মতো এ ধরণীতে কেবল প্রশান্তির জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছে আজীবন আমরণ। নারীর উৎসর্গীপনা জীবন জীবনান্তে স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়। অথচ বাংলার নারী আজো অবহেলিত বিভিন্নভাবে ভিন্ন আঙ্গিকে। কোথাও কোথাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী তার মর্যাদা পাওয়া শুরু করেছে। দেশে বর্তমান জনসংখ্যার অুনপাত পুরুষ:মহিলা হলো ১০৬ঃ১০০। আমাদের এ দেশে ৯২% পরিবার পুরুষ শাসিত আর মাত্র ৮% পরিবার মহিলা শাসিত। শহরের তুলনায় গ্রামের মহিলাদের প্রভাব একটু বেশি। সাধারণভাবে শিক্ষার হার পুরুষ ৪৫.৫% আর মহিলা ২৪.২%। শহরে একটু ভিন্ন। শহরে ৫২.৫% আর গ্রামে ২০.২০%। একই পরিমাণ সময় একসঙ্গে কাজ করার পর পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে বেশি মজুরি পান, অথচ দেখা যায় মহিলারা পুরুষের তুলনায় বেশি কাজ করেন। মোট মহিলাদের মধ্যে ৭১.৫% কৃষি কাজে নিয়োজিত আর সে তুলনায় ৬০.৩% পুরুষ কৃষি কাজে নিয়োজিত। মোট কৃষি ৪৫.৬% বিনামূল্যে মহিলারা শ্রম দেন আর বাকি ৫৪.৪% অংশ শ্রম টাকার বিনিময়ে কেনা হয়।  যে নারী কৃষির অগ্রদূত, যে নারী আমাদের কৃষি সমাজ সংসারকে মহিমান্বিত করেছে জীবনের সবটুকু বিনিয়োগ দিয়ে তার কষ্টগাথা আসলেই এখনো অমানবিক। এ দেশে ৮৫% নারীর উপার্জনের স্বাধীনতা নেই। মাত্র ১৫% নারী নিজের ইচ্ছায় উপার্জনের স্বাধীনতা পান। আর যারা আয় করেন তাদের প্রায় ২৪% এরই নিজের আয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে গ্রামের তুলনায় শহুরে নারীদের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা বেশি। দেশে ৮৫% নারী কোনো না কোনো কারণে ভিন্নতর নির্যাতনের শিকার। বিবিএসের জরিপে জানা যায় ৯২% খানার প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামী। আর মাত্র ২.২% নারী পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তবে অল্পসংখ্যক স্বামীই নারীকে উপার্জনের স্বাধীনতা দেন। সেসব স্বামীর ৯৩.১৯% স্ত্রীর উপার্জন করার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেন না।                               জমির মালিকানায় পুরুষের আছে ৮১%। আর নারীর মাত্র ১৯%। বাড়ির মালিকানা ক্ষেত্রে ৮৬% পুরুষের বিপরীতে নারীর হার মাত্র ১৪%। ৪৬% নারীর স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ার জন্য স্বামীর অুনমতি নিতে হয়। এখনো মেয়ে জন্ম দেওয়ার কারণে ৬% নারী স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আমাদের নারীরা আমাদের দুমুঠো অন্ন জোগাবার জন্য জ্বালানি সংগ্রহের জন্য যত্ন আত্তি সেবা দেওয়ার জন্য আকুল থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, মাস পেরিয়ে বছর এবং আজীবন আমরণ। 

 নারী শ্রম শক্তির মধ্যে ৬৮ শতাংশই কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের সাথে জড়িত। কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে কৃষিকাজে সবচেয়ে বেশি নারী নিয়োজিত রয়েছেন। ফসলের প্রাক বপন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এমন কি বিপণন পর্যন্ত অনেক কাজ নারী এককভাবেই করে। বলা চলে কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে নারী। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যানে কৃতজ্ঞচিত্তে নারীর এ উপস্থিতির কোনো হিসাবে স্বীকৃতি নেই। এমনকি কৃষি কাজে জড়িত এ বিপুল নারী শ্রমিকের তেমন কোনো মূল্যায়নও করা হয় না। এখনো গ্রামীণ সমাজে কৃষি ও চাষের কাজকে নারীর প্রাত্যহিক কাজের অংশ বলে বিবেচনা করা হয়। সেখানে মজুরি প্রদানের বিষয়টি অবান্তর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র মজুরি দেয়া হয়।  সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করলেও কৃষিখাতে নারী শ্রমিকের বৈধ পরিচিতি নেই। কাজ করে নারী নাম কেনে পুরুষ। এ ছাড়া অন্যান্য অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অন্য নারী শ্রমিকের মতোই কৃষিখাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকেরাও তীব্রভাবে বৈষম্যের শিকার হন। কাজে স্বীকৃতির অভাব চরমভাবে লক্ষণীয়। এ ছাড়া নিয়মহীন নিযুক্তি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, নারীর অধিক আন্তরিকতা, অল্প মজুরি, মজুরি বৈষম্য, দুর্ব্যবহার এবং আরো নানা ধরনের নিপীড়ন তো রয়েছেই।

তার ভিতরেও বটিয়াঘাটার নারীরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন। জয় হোক নারীর জয় হোক দেশ মাতার।