আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বাসক পাতাকে নানা রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। কাশি, কফ বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় বাসক পাতার ব্যবহার এর প্রচলন রয়েছে দেশে । বাসক এর বৈজ্ঞানিক নাম Adhatoda vasica লোকালয়ের কাছেই আর্দ্র সমতলভূমিতে এটি বেশি জন্মে। বাসক অর্থ সুগন্ধকারক। গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে কিংবা ঝোপঝাড় এ বেড়ে ওঠে এই বাসক। বাসকের পাতায় "ভাসিসিন" নামের ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে। শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এ পাতা ব্যবহার করে তৈরি করছে কফ নিরাময়ের  সিরাপ। এছাড়াও বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার হচ্ছে। তাই বেড়ে চলেছে এর চাহিদা।

ভেষজ গাছ বাসক চাষ এখন পরিনত হয়েছে অর্থ উপর্জনের পন্থায়।  এই বাসক পাতা বিক্রি করেই সাবলম্বী হচ্ছে গ্রামীন নারীরা। সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় রাস্তার পাশে বা বাড়ির চারপাশে  বাসক গাছ লাগানো হচ্ছে। বাসক পাতা চাষে কোন আলাদা যত্নের প্রয়োজন নেই। লাগেনা কোন সার বিষ প্রয়োগের। গবাদী পশুও এর পাতা খায় না। গ্রামের দরিদ্র নারীরা প্রতিদিনই সংগ্রহ করছে শত শত বাসক পাতা। পরিচ্ছন্নভাবে রোদে শুকিয়ে তা বিক্রি করছে ওষুধ কোম্পানির কাছে। এতে তারা অর্থনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে।প্রতি কেজি শুকনো বাসক পাতা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০টাকা দরে।

১-২টি গিটযুক্ত কাটিং গর্তে রোপন করতে হবে।গর্তে পর্যাপ্ত গোবর সার দিতে হবে। ছয় মাস থেকে পাতা সংগ্রহ করা যাবে।

বাসকের ভেষজ ব্যবহার:

·         পানির জীবাণু মুক্ত করতে, হাত-পা ফুলে গেলে, চামড়ার রং উজ্জ্বল করতে গাছের উপকারিতা অনেক।

·         বাসক পাতার রস গোসলের আধ ঘণ্টা আগে মাথায় কয়েক দিন মাখলে উকুন মরে যায়। আমবাত ব্রণশোথে (ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থা) বাসক পাতা বেঁটে প্রলেপ দিলে ফোলা ব্যথা কমে যায়।

·         যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্য শ্বাসকষ্ট হয় বা কাশি হয় তা হলে বাসক পাতার রস - চামচ এবং কন্টিকারী রস - চামচ, চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।

·         প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা থাকলে বাসকের ফুল বেঁটে - চামচ মিছরি - চামচ সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।

·         বাসকের কচি পাতা ১০-১২টি এক টুকরো হলুদ এক সঙ্গে বেঁটে দাদ বা চুলকানিতে লাগালে কয়েক দিনের মধ্যে তা সেরে যায়।

·         বাসক পাতা বা ফুলের রস - চামচ মধু বা চিনি চামচ-সহ প্রতি দিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়।

·         পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে বাসক পাতা ২০টি থেঁতো করে কাপ জলে সিদ্ধ করে কাপ থাকতে নামিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় কুলকুচি করলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।

·         বাসক পাতার রস গায়ে লাগালে ঘামের দুর্গন্ধ দূর হবে।