বেগুনি ‘প্যাশন ফল’ চাষ হচ্ছে নওগাঁয়

বেগুনি ‘প্যাশন ফল’ চাষ হচ্ছে নওগাঁয়


নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার রূপগ্রাম গ্রামের উচ্চশিক্ষিত তরুণ কৃষক সোহেল রানা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বেগুনী রঙের ‘প্যাশন ফল’-এর চাষ শুরু করেছেন। কৃষিবিদরা বলছেন, ‘প্যাসিফ্লোরা ইডুলিস’ বৈজ্ঞানিক নামের বিদেশি এই ফলটি দেশে প্রথম চাষ শুরু হয়েছে সোহেল রানার হাত ধরেই।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফলের বীজ, চারা এবং সায়ন সংগ্রহ করে নিজের বাগানে চাষ করা সোহেল রানার শখ। গত ২৬ এপ্রিল তার বাগান ঘুরে দেখা যায় যে, অন্তত ১২ জাতের নতুন ফলের গাছ রয়েছে তার বাগানে এবং অধিকাংশ গাছে ফল আসতেও শুরু করেছে।

গত বছরের ৭ এপ্রিল কুমিল্লার মোহাম্মেদ বাহাদুর নামের একজন ইতালি প্রবাসী ব্যক্তি তাকে এই ফলের দুইটি চারা পাঠিয়েছিলেন। তার একটি তিনি উপহার দেন বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এনামুল হককে।

সোহেল রানা বলেন, “চারাটি কিছুদিন টবে রেখে গত বছরের মে মাসে বাগানের একটি পুকুরের পাড়ে রোপণ করি। শাখা-প্রশাখা মেলে তরতর করে বেড়ে উঠেছে গাছটি। এর জন্য বড় একটি মাচা তৈরি করতে হয়েছে। এ বছর মার্চে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত গাছটিতে প্রায় দুই শতাধিক ফল ধরেছে। এ মাসেই ফল সংগ্রহ করা যাবে।”

এই ফলের গাছ থেকে প্রতি বছর দুবার ফল পাওয়া যায় বলেও জানান সোহেল রানা।

এম এনামুল হক বলেন, “ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে।”

১০০ গ্রাম প্যাশন ফলে রয়েছে অ্যাশ (ফাইবার) ৩.১৫ গ্রাম, আমিষ ৯.৪ গ্রাম, শর্করা ১৩.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩.৫ গ্রাম, লৌহ ৪ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৭৫৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ২০-৩০ মিলিগ্রাম। ফলটিতে ভিটামিন বি১, বি২ ছাড়াও আরও নানা পুষ্টি রয়েছে বলে জানান কৃষিবিদ এম এনামুল হক।

‘পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বছরব্যাপী ফল উৎপাদন’ প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, “আমাদের দেশে হলুদ প্যাশন ফলের চাষ হচ্ছে গত ৫০ বছর ধরে, কিন্তু বেগুনি রঙের প্যাশন ফল এই প্রথম।”

“এই ফল আমি ভিয়েতনামে দেখেছি। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং রঙিন। কেউ যদি প্রথমবার এই ফলের শরবত পান করেন তাহলে এর প্রতি তার একটি ‘প্যাশন’ তৈরি হবে। ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে কৃষক লাভবান হবেন, কারণ হলুদ প্যাশন ফলের চেয়ে এর ফলন দ্বিগুণ হয়”, বলেন মেহেদী মাসুদ।

ইতালির বেচেঞ্জা শহর থেকে মুঠোফোনে কুমিল্লার বাহাদুর জানান, “আমি যখন ইতালির শহরগুলোতে ঘুরি এবং সুন্দর ফলের বাগান দেখি, তখন আমার নিজের দেশের কথা মনে হয়। আমাদের দেশের আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন জাত পাঠাই। দেশের শিক্ষিত তরুণদের ফলচাষে অনুপ্রাণিত করার জন্য আমি তাদেরকে সহায়তা করি।”

গোটা নওগাঁ জেলায় সোহেল রানা একজন সফল কৃষক হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকায় বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ করেছেন। কিন্তু, এই কাজে তেমন মনোযোগ দিতে পারেননি সোহেল। গ্রামের ক্ষেত-খামারই তাকে বেশি টানতো।